ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি তা নিয়ে আজ আলোচনা করব। মার্কেটিং এর এই পদ্ধতিটি বর্তমান বিশ্বে খুবই উদীয়মান একটি বিষয়। করণ, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের বদৌলতে বর্তমান সময়ে অনলাইন কার্যক্রম আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রথাগত মার্কেটিং এখন দিন দিন হারিয়ে যেতে চলেছে। মানুষ এখন আগের মত তার সেই প্রভাব বলয়ে নেই।
বিগত দশক থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রতিটি কম্পানি বা সংস্থা তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মার্কেটিং এর জন্য এটিকে একটি অন্যতম সেরা মার্কেটিং প্রক্রিয়া হিসেবে বেছে নিয়েছে।
তাই, সময়ের পথ পরিক্রমায় আমাদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে পরিস্কার একটি ধারণা না থাকলেই নয়।
তবে, মুল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে প্রাথমিক একটি ধারণা থাকা প্রয়োজন। যা আমি অন্য একটি পোষ্টে আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। সেখান থেকে দেখে আসতে পারেন।
যাহোক, এই পোষ্টে ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার, কি কি – এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন – শুরু করা যাক।
Table of Contents
ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার?
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ এর মধ্যে আমরা এখানে মুলত: ৮ প্রকার নিয়ে আলোচনা করব। যা নিচে এক এক করে উল্লেখ করছি।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
এসইও কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে ব্যবসাকে গুগল সার্চ র্যাংকিং এর উচ্চতর পর্যায়ে অবস্থানে নিয়ে আসা। ব্যবসা বলতে এখানে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেমন কোন ব্যবসায়িক পণ্য বা সেবার বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য টার্গেট অডিয়েন্সের নিকট যে কনটেন্ট দিয়ে বার্তা পৌঁছানো হয়। আর ঐ বার্তাটি গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজ এর প্রথম দিকে যে প্রক্রিয়া স্থান লাভ করা যায় তাকেই সহজ ভাষায় আমরা এসইও বলতে পারি।
আরোও সাধারণভাবে বলতে গেলে, যেমন ধরুন আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন পণ্য বা সেবার সাথে মিল আছে এমন কোন শব্দ প্রয়োগ করে কেউ গুগলে অনুসন্ধান করার পর গুগল এর সার্চ রেজাল্ট পেজ এর প্রথম দিকে যদি আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের পজিশন চলে আসে – সেটিকেই এসইও কাজের একটি উদাহারণ বলা যেতে পারে।
যখন গুগলের রেজাল্ট পেজ এর প্রথম দিকে স্থান দখল হবে, তখন আপনার সাইটে ভিজিটর এর সংখ্যা বেড়ে যাবে। আর ভিজিটরগুলোই এক সময় আপনার কাস্টোমারে পরিণত হবে। এটিই হল মুল কনসেপ্ট।
পে পার ক্লিক বা পিপিসি
পিপিসি দ্বারা বুঝায় হচ্ছে পেইড এডভারটাইজমেন্ট যা সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ এ দৃশ্যমান থাকে। যখন আপনি সার্চ ইঞ্জিনকে পেমেন্ট বন্ধ করে দিবেন বা সেখানে আপনার ব্যালেন্স ফুরিয়ে যাবে তখন আপনার এডস সেখানে আর প্রদর্শিত হবে না। এসইও এর মত পিপিসি আপনার সাইটে ভিজিটর বা ট্রাফিক আনার ক্ষেত্রে কাজ করে। এদের উদ্দেশ্য একই। পার্থক্য শুধু এসইও কাজের মাধ্যমে ভিজিটর আনতে সার্চ ইঞ্জিনকে কোন পয়সা দিতে হয় না। এজন্য এর দ্বারা আনিত ট্রাফিকের নাম অরগানিক ট্রাফিক। আর, পিপিসি এর ক্ষেত্রে পয়সা খরচ হয়।
পিপিসির উদাহারণ আরোও পরিস্কারভাবে যদি বলি – ধরুন আপনি ”digital marketing course” লিখে গুগলে সার্চ দিলেন। তারপর, দেখবেন, রেজাল্ট পেজ এর সবার উপরের দিকে এক বা একাধিক এডস প্রদর্শিত হচ্ছে। সেগুলোই হচ্ছে পিপিসি এডস। অনেক সময় সার্চ রেজাল্ট পেজ এর সাইডে এই এডস প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
এছাড়া, গুগলের ডিসপ্লে এডস নামে আর একটি অপশন আছে যার আওতায় অনেক ওয়েবসাইট বা ব্লগের কনটেন্ট পেজে এমনকি ইউ টিউব ভিডিও শুরুর পূর্বে, মাঝে ও পরে এসব এডস দেখা যায়।
মনে রাখতে হবে, এইসব পিপিসি এডস এর ক্ষেত্রে আপনার পয়সা মুলত তখনই কাটা হবে যখন কোন ভিজিটর এই বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করবে।
সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
এই ধরণের মার্কেটিং ঐ সব ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে বুঝায় যার চ্যানেল হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রায় সকলেই সোশাল মিডিয়ার সাথে পরিচিত কিন্তু এ ক্ষেত্রে মার্কেটারকে একটি সমন্বিত এবং কৌশলগত দৃষ্টি ভঙ্গি নিযে এগুতে হবে। এই মার্কেটিং শুধুমাত্র পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট দেওয়া ও তার কমেন্টের জবাব দেওয়ার মধ্যেই কেবল সিমাবদ্ধ নয়। এর বাইরেও এখানে অনেক কিছু করণীয় থাকে।
এখানে আপনাকে ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত পোষ্ট করে যেতে হয়। এর জন্য আপনি কিছু আটোমেশন টুলের সাহায্য নিয়ে কাজটি সহজভাবে করতে পারেন। এই মার্কেটিং এর আর একটি গুরত্বপূর্ণ দিক হল এনালাইটিকস। আপনি আপনার ব্যবসায়িক পণ্য বা সেবা সম্পর্কে যে সব পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন তার পারফরমেন্স মনিটর করতে হবে। বিশেষ করে যখন আপনি কোন পেইড ক্যামপেইন রান করাবেন, তখন।
কনটেন্ট মার্কেটিং
এটি হলো আপনার প্রোডাক্টস বা সার্ভিস সম্পর্কে তথ্যের আদান প্রদান। যাতে অডিয়েন্সের মাঝে আপনার কম্পানির ব্র্যান্ডের উপর এক ধরণের সচেতনতা বা কৌতুহল তৈরি হয় যাকে মার্কেটিং এর ভাষায় brand awareness বলে।
এই মার্কেটিং এর আলটিমেট উদ্দেশ্য এটাই যে, আপনার পন্য বা সেবা সম্পর্কিয় কনটেন্ট পড়ার পর পাঠকগণ যেন এক সময়ে কাস্টোমারে পরিবর্তন হয়ে যায়। আপনি যদি বায়ার জার্নি সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে দেখবেন এই ভ্রমনের শুরু হয় ব্র্যান্ড এওয়্যারনেস থেকে এবং শেষ হয় কনভার্শনে।
কনটেন্ট মার্কেটিং এ কনটেন্ট এর উদাহারণ স্বরুপ বলা যায়, যেমন – ব্লগ পোষ্ট, ই-বুক, ডিজিটাল ভিডিও, পডকাস্ট ইত্যাদি। অর্থাৎ, এসবের মাধ্যমে কনজিউমার এর মাঝে এক ধরণের ভেল্যু তৈরি হয়। এমন নয় যে, সরাসরি বিক্রয়ের কোন অনুরোধ পত্র।
ই-মেইল মার্কেটিং
আধুনিক বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল এপ্লিকেশন এবং আরোও অন্যান্য মার্কেটিং চ্যানেলের উত্থান ঘটা সত্ত্বেও ইমেইল এখনোও পর্যন্ত একটি অন্যতম সেরা মার্কেটিং চ্যানেল হিসাবে পরিগনিত বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। এটি হতে পারে কনটেন্ট মার্কেটিং কৌশলের এর একটি অংশ যা কাস্টোমারকে ভেল্যু প্রদান করে এবং এক পর্যায়ে এর মাধ্যমে আপনার অডিয়েন্স কাস্টোমারে পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ই-মেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও আপনি বিভিন্ন সফ্টওয়্যার এর সাহায্য নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারেন। বিশেষ করে আপনার ক্যামেপেইনের পাঠানো ইমেইলগুলোর অডিয়েন্স কর্তৃক খুলে দেখার হার কেমন এবং ইমেইল খোলার পর সেখানে আপনার প্রদত্ত লিংক এর ক্লিক থ্রো রেট কেমন। কারণ, মুলত: এই দু’টি বিষয়ই হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য।
এর জন্য প্রয়োজন ইমেইল টেমপ্লেটে খুব সুন্দর অ্যাপিলিং কনটেন্ট তৈরি করা যাতে যাদের কাছে পাঠানো হয় তারা যেন খুব সুন্দর এবং উপকারি বার্তা মনে করে তা খুলে দেখে বা পড়ে।
মোবাইল মার্কেটিং: ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার
এই ধরণের মার্কেটিং এর বেলায় আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের নিকট তাদের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন বা টেবলেট এর মাধ্যমে পৌঁছতে হবে। এর জন্য আপনাকে টেক্সট মেসেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মোবাইল এপ্লিকেশনের সাহায্য নিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা লব্ধ এক তথ্য থেকে জানা যায়, অ্যামেরিকায় দৈনিক গড়ে ৫ ঘন্টা সময় মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে সময় কাটায়।
মার্কেটিং এনালাইটিকস
ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার – শীর্ষক আজকের আলোচনার প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এলাম। এনালাইটিকস বিষয়টি যদিও এর প্রকারভেদ এর মধ্যে সরাসরি গণ্য নয়, তথাপি বিষয়টি সকলেরই জানা দরকার।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ এবং সুবিধাজনক বিষয় হল আপনি এই পদ্ধতি অবলম্বনের পর অডিয়েন্সের যাবতিয় কর্মকান্ডের গতিবিধি পরিমাপ করতে পারবেন যা রীতিগত মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
যেমন, ধরুন বিভিন্ন সফ্টওয়্যার বা টুলস এর এনালাইটিকস অপশন ব্যবহার করে আপনি আপনার অডিয়েন্সের আচরণ বা ইউজার বিহেভিয়ার জানতে পারবেন। এই ভাবে যে, তারা কতক্ষণ আপনার সাইটে অবস্থান করল বা লিংক এ কতটি ক্লিক হলো ইত্যাদি।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমান সময়ে খুব প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা উপার্জন করা যায়। পদ্ধতিটি অনেকটা কোন কম্পানির সেলস ম্যান এর মত কাজ। তবে, পার্থক্য একটিই – তা হল, বাস্তবিক অর্থে একটি কম্পানির সেলস ম্যান তার নিজস্ব কম্পানির বাইরে অন্য কোন কম্পানির পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য প্রোমোশন করতে পারে না।
কিন্তু, একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনি এক সাথে অনেক কম্পানির পক্ষে কাজ করার সুযোগ পাবেন। আপনার প্রোমোশনের ফলে যখন কোন এফিলিয়েট পণ্য বা সেবা সফলভাবে বিক্রয় কাজ সমাধা হবে, ঠিক তারপরই আপনি নির্ধারিত আপনার প্রাপ্য কমিশনটি উপভোগ করতে পারবেন। অন্যথায় নয়। এখানে মাসিক ভিত্তিতে কোন বেতন-ভাতার প্রচলন নেই।
বন্ধুগন, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার, কি কি বিষয়ের উপর যে সকল তথ্য পেশ করা হলো তাতে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ, সময় নিয়ে পড়ার জন্য।