ব্লগিং কি, কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন তার উপর নেট জগতে তথ্যের কোন ঘাটতি নেই। এর উপর রয়েছে অনেক টিউটোরিয়াল যেখান থেকে বিষয়টির উপর আপনি ধারণা পেতে পারেন।
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম সেরা হাতিয়ার হিসাবে আপনি ব্লগিং কে ধরতে পারেন।
অনলাইলে বিচরণের অভ্যাস থাকলে আপনিও নিশ্চয়ই কোন না কোন ব্লগ পোষ্ট পড়ে থাকবেন। যেমন, এই মুহুর্তে আপনি যা পড়ছেন তা একটি ব্লগ পোষ্ট।
তবে, আসল বিষয় হলো, ব্লগে যে সব পোষ্ট থাকে তা সঠিকভাবে লেখা হয়েছে কিনা এবং যে বিষয়ে লেখা হয়েছে তা থেকে পাঠক উপকৃত হলো কিনা।
বাস্তবিক অর্থে ব্লগিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন পোষ্ট লিখে আপনি আপনার অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারেন।
আপনি যদি ব্লগিং এর নাম জেনে থাকেন এবং এ বিষয়ে একেবারেই নতুন যে কোথা থেকে কিভাবে শুরু করতে হবে, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় রয়েছেন।
আলোচ্য পোষ্টে ব্লগিং কিভাবে শুরু করা যায় – তার উপরই থাকবে আমার আলোচনার মুল ফোকাস। যাতে আপনি খুব সহজেই অগ্রসর হতে পারেন।
আলোচনার শুরুতেই ব্লগিং কি – তা নিয়ে কথা বলব।
Table of Contents
ব্লগ পোষ্ট ও ব্লগিং কি?
ব্লগ পোষ্ট হচ্ছে যে কোন আর্টিকেল, সংবাদের একটি টুকরো বা কোন গাইড যা ওয়েবসাইটের ব্লগ সেকশন থেকে পাবলিশ করা হয়। একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় বা টপিকস এর উপর ভিত্তি করে ব্লগ পোষ্ট করা হয়। যা হতে পারে শিক্ষামুলক এবং যার শব্দ দৈর্ঘ ৬০০ থেকে শুরু করে ২০০০ প্লাস হতে পারে।
ব্লগ পোষ্টে বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া ফাইলস থাকতে পারে, যেমন, ইমেজ, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিকস এবং কোন ইন্টার একটিভ চার্ট।
যেকোন টপিকস এর উপর ভিত্তি করে ব্লগ পোষ্ট এর মাধ্যমে আপনি নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বা অনুভূতির প্রতিফলন ঘটাতে পারেন।
এবারে, ব্লগিং কি এর সহজ উত্তর হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় ব্লগ পোষ্ট তৈরি করে প্রচার করা হয় তাই হচ্ছে ব্লগিং।
আপনার যদি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেখানকার ব্লগে নিজের ব্যবসায়িক পণ্য বা সেবার উপর রিভিউ আর্টিকেল লিখে অডিয়েন্সের মাঝে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। যা কাস্টোমারের হৃদয়ে আপনার নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং কনভার্শনের বৃদ্ধি করে অধিক রেভিনিউ অর্জন করতে পারেন।
অধিকন্তু, এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে আপনার সাইটে ট্রাফিকের পরিমান বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন? চলুন সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করি।
কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন?
ব্লগ শুরু করার ধাপসমূহ এক এক করে নিচে উল্লেখ করছি-
আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন
আপনি ব্লগ পোষ্ট লেখার পূর্বে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কে বা কারা হবে তা পরিস্কারভাবে নির্ধারণ করুন।
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন – তারা কি জানতে চায় এবং তাদের জানার বিষয়টি আপনার নিকট কতটা গুরত্বপূর্ণ মনে হয়?
আর এখানেই চলে আসে ‘buyer personas’ এর প্রসঙ্গটি।
আপনি আপনার বায়ার পারসোনাস সম্পর্কে কতটুকু জানেন এবং তাদের আগ্রহের জায়গাটি কোথায় বাকি রয়েছে – বিষয়টি নিয়ে একবার ভাবুন। ব্লগ পোষ্টের টপিকস নির্ধারণের পূর্বে বায়ার পারসোনাস সম্পর্কিত এই বিষয়টি গুরত্বের সাথে গ্রহন করতে হবে।
উদাহরণ স্বরুপ, আপনার পাঠকবৃন্দ যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে এবং কিভাবে ব্যবসা শুরু করা যায় বিষয়টি সম্পর্কে তার জানতে চায়। আর আপনি এর বিপরিতে অন্য কোন বিষয় এর উপর আর্টিকেল লিখে তাদের সামনে উপস্থাপন করেন, তাহলে কাজ হবে না।
আপনাকে ঐ টপিকস এর উপর লিখতে হবে যা তারা জানতে চায়।
আপনার প্রতিযোগীদের স্টাইল পর্যবেক্ষণ করুন?
যে সব ব্লগার ব্লগিং জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তাদের ব্লগে প্রবেশ করুন। দেখুন তাদের লেখার স্টাইল ও নমুনা। তাদের লেখা কোন কোন টপিকস কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অডিয়েন্স কিভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
এতে করে আপনি একটি বাস্তব সম্মত ধারণা পাবেন। যা নতুনভাবে ব্লগিং শুরু করতে আপনাকে পথ নির্দেশ করবে।
ব্লগের টপিকস বাছাই করুন
আপনার ব্লগে লেখা শুরু করার পূর্বে একটি টপিক নির্বাচন করুন যার উপর ভিত্তি করে আপনি লেখা লেখি শুরু করবেন। যেহেতু আপনি আপনার ব্লগের কাংখিত নিশ পেয়ে গেছেন, তাই যে টপিকের উপর লেখবেন তা হতে পারে খুব সাধারণ।
নিশ কথাটি ডিজিটাল মার্কেটিং এ ব্যবহৃত একটি কমন শব্দ। যার অর্থ কিনা সুনির্দিষ্ট একটি ক্যাটাগরি বা সাব ক্যাটাগরি যার অন্তর্গত পণ্য বা সেবা আপনি বাজারজাত করবেন।
ব্লগিং এর ভাষায় – যদি খুব সহজে বলি তাহলে নিশ এর অর্থ দাড়াবে বায়ার পারসোনাস এর ভিত্তিতে আপনার বেছে নেওয়া সেই টপিকস যা সম্পর্কে আপনার অডিয়েন্স জানতে চায়।
যাহোক, টপিক নির্ধারণের সময়ে নিচের প্রশ্নগুলি নিজেকে করুন-
- আমি কাকে লিখতে চাই?
- যে টপিকস এর উপর লিখব তা আমি নিজে কতটুকু বুঝি?
- টপিকস টি কি প্রাসঙ্গিক হবে?
আপনার নিজস্ব স্বাতন্ত্রতা সনাক্ত করুন
নেট জগতে অনেকেই ব্লগিং এর সাথে জড়িত। বহু প্রতিষ্ঠিত ব্লগ বিশ্ব ব্যাপি রয়েছে। কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু, এত সবের মাঝে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স আপনারটি কেন বেছে নিবে বা আপনাকে কেন পছন্দ করবে? অথচ আপনি নতুনভাবে সবে মাত্র ব্লগিং শুরু করতে যাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে আপনার ইউনিকনেস কি বা কতটুকু। বিদ্যমান ব্লগারদের তুলনায় নতুন কি কি সুবিধা আপনি আপনার অডিয়েন্সদের দিতে পারবেন। আপনার মাঝে কি নতুনত্ব কিছু আছে?
বর্তমান প্রতিযোগিতা পূর্ণ বিশ্বে এই বিষয়টি নিয়েও আপনাকে ভাবতে হবে।
ব্লগের নামকরণ করুন
এখানেও আপনার ক্রিয়েটিভ হওয়ার একটি জায়গা আছে। এমন একটি নাম বেছে নিন যা দেখে অডিয়েন্স বুঝতে পারে যে আপনি কোন টপিকস এর উপর ব্লগিং করছেন।
এর সাথে সাথে আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যা নিম্নরুপ-
- ব্লগের এমন নাম ঠিক করুন যা সহজে বলা যায় এবং ব্রাউজারে টাইপ করা যায়
- আপনার ব্র্যান্ড এর বার্তার সাথে ব্লগের নামের একটি যোগসুত্র রাখুন
- বিবেচনা করুন, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কি চাচ্ছে?
এর বাইরেও, আপনি ব্লগ নেম জেনারেটরের সাহায্য নিতে পারেন।
ব্লগ ডোমেইন এর নাম রেজিষ্ট্রেশন করুন
ডোমেইন হলো আপনার ওয়েব এড্রেসের নাম যা ব্যবহার করে পাঠকগন অনলাইন জগত থেকে আপনার ওয়েব বা ব্লগ সাইট টি খুঁজে পাবে।
নিচে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছি যেখান থেকে কাজটি সেরে নিতে পারেন-
- নেমচিপ
- হোস্টিংজার
- গো ড্যাডি
- ব্লু হোস্ট
- হোস্ট গ্যাটর; ইত্যাদি।
ডোমেইনকে হোস্টিং সার্ভারে রাখুন
ডোমেইন কেনার পর তাকে হোস্টিং সার্ভারে রাখতে হবে। যাতে, দুনিয়ার যে কোন স্থান থেকে যে কেউ আপনার সাইটে প্রবেশ করতে পারে। বাজারে অনেক ওয়েব হোস্টিং কম্পানি আছে যেখান থেকে আপনার সুবিধামত মেয়াদে হোস্টিং প্যাকেজ ক্রয় করতে পারেন।
তবে, হোস্টিং কেনার পূর্বে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন। তা হলো, হোস্টিং কম্পানির ডাটা সেন্টার এর অবস্থান যেন আপনার বেশিরভাগ অডিয়েন্সের কাছাকাছি হয়।
তা না হলে, ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড এ সমস্যা হতে পারে।
আপনি যদি, ভারতিয় উপমাহাদেশের হয়ে থাকেন, তাহলে হোস্টিংজার, গো ড্যাডি বা হোস্ট গ্যাটর কম্পানি থেকে হোস্টিং প্যাকেজ ক্রয় করতে পারেন। কারণ এর ডাটা সেন্টার ভারতে অবস্থিত।
সিএমএস টুল বাছাই করে ব্লগ সেট আপ করুন
ধরে নেই, আপনার ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা হয়ে গেছে। এবার আপনাকে সিএমএস টুল ঠিক করতে হবে। সিএমএস বলতে কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট টুল বলা হয়। যার মাধ্যমে আপনার ব্লগিং এর কাজটি সহজে সম্পন্ন করা যাবে।
বাজারে বেশ কয়েকটি সিএমএস টুলস আছে। এর মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহার বান্ধব।
আপনি আপনার হোস্টিং একাউন্ট থেকে খুব সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করতে পারেন।
তার পর, একটি কাজই বাকি তা হলো – টপিকস এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে এক একটি আর্টিকেল লেখা আর পোষ্ট করে যাওয়া।
বন্ধুগন, ব্লগিং কি ও কিভাবে শুরু করা যায় – বিষয়টির উপর যে সব তথ্য উপস্থাপন করা হলো তার উপর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ করছি।