ওয়েবসাইটের টেকনিক্যাল এসইও কাজের নিয়ম।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ফিল্ডের একটি অন্যতম গুরত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে টেকনিক্যাল এসইও

আপনার জনপ্রিয় কোন টপিকস এর খুব সুন্দর উচু মানের একটি কনটেন্ট থাকতে পারে। কিন্তু, আপনার সাইটে টেকনিক্যাল এসইও বিষয়ে যদি কোন ইস্যু বা সমস্যা বিদ্যমান থাকে তাহলে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ এ স্থান পেতে অনেক বেগ পোহাতে হবে।

তাই, আপনার সাইটের টেকনিক্যাল এসইও অপটিমাইজ করার কাজটি অবশ্যই গুরত্ব পাওয়ার যোগ্য এবং এর জন্য আপনাকে যথাসাধ্য সময় দিয়ে কাজ করতে হবে।

এই আর্টিকেলে টেকনিক্যাল এসইও এর মুল অংশগুলি নিয়ে আলোচনা করব এবং আপনি কিভাবে আপনার সাইটের টেকনিক্যাল এসইও কাজ সম্পন্ন করবেন তার ধারণা দেব।

টেকনিক্যাল এসইও কাজের নিয়ম: কিছু ব্যাসিক ধারণা

টেকনিক্যাল এসইও অন-পেজ এসইও এর একটি অংশ এবং এটি কনটেন্ট এর বাইরে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন উপাদান অপটিমাইজ করতে ব্যবহৃত হয়।

কাজটি সঠিকভাবে করা গেলে কোন সুনির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের বিপরীতে সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েব কনটেন্ট এর র‌্যাংকিং এর সুযোগ বেড়ে যাবে।

খুব সাধাারণ ভাবে যদি বলি, আপনার ওয়েবসাইটের টেকনিক্যাল বিষয়াদি এই ধরণের এসইও এর মুল ফোকাস। যা সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংকিং করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

টেকনিক্যাল এসইও একটি প্রসস্ত ক্ষেত্র যেখানে নিচের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত-

  • XML সাইটম্যাপ
  • ক্রাউলিং এবং ইনডেক্সিং
  • মোবাইল অপটিমাইজেশন
  • সাইট স্ট্রাকচার
  • সাইট স্পিড
  • SSL সার্টিফিকেট
  • ইমেজ এসইও
  • ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল লিংকু
  • ক্যানোনিকাল URLs, ইত্যাদি।

টেকনিক্যাল এসইও কাজের নিয়ম কি?

এবারে আমি টেকনিক্যাল এসইও নিয়ে ওয়েবসাইট কিভাবে অপটিমাইজ করতে হয় তার উত্তম চর্চা বিষয়ে কথা বলব। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলির দিকে নজর দিতে হবে-

আপনার পছন্দের ডোমেইন নির্দিষ্ট করুন

আপনি যখন প্রথম বারের মত আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট সেট আপ করবেন, তখনই এ বিষয়টি ঠিক করে নিতে হবে যে, আপনার ডোমেইন এর কোন ভার্শন আপনি ব্যবহার করবেন তার জীবদ্দশায় সব সময়ের জন্য। তারপর, সেভাবেই সার্চ ইঞ্জিনকে নির্দেশনা দিতে হবে।

চলুন দেখা যাক, কেন তা করতে হয়।

একটি ওয়েবসাইটে আপনি বাই ডিফল্ট  ভাবে তার ডোমেইন নামের পূর্বে www দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন।

উদাহরণ স্বরুপ, আমার এই সাইটের ডোমেইন হল seosheba.com. যা ব্রাউজারে http://www.seosheba.com এবং http://seosheba.com  উভয় ভাবেই প্রবেশ করা যায়।

যদিও, ইউজারের নিকট এটি বড় কোন ব্যাপার নয়, কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন উভয়কে দু’টি ভিন্ন ওয়েবসাইট হিসাবে দেখবে।

এর অর্থ এই দাড়াবে যে, আপনার সাইটে ইনডেক্সিং সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বা ডুপ্লিকেট কনটেন্ট এর ইস্যু দেখা দিতে পারে। যা আপনার ডোমেইন অথারিটি নষ্ট করে দেওয়ার একটি কারণ হবে।

এর সমাধান হিসাবেই, আপনার ডোমেইনের কোন ভার্শন ব্যবহার করবেন তা ঠিক করতে হবে এবং সেটি অর্থাৎ আপনার নির্বাচিত ভার্শনটি সার্চ ইঞ্জিনকে অবহিত করতে হবে।

এই ভার্শন নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকের মনে এরকম একটি প্রশ্ন উঠতে পারে, ডোমেইনের পূর্বে www ব্যবহার করা না করার উপর এসইও এর ক্ষেত্রে কোন প্রভাব থাকে কিনা।

এর উত্তর – না। এটি শুধুই আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের বিষয়।

যে বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার পছন্দের সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেওয়া। যা ওয়েবসাইট টির সারা জীবনের জন্য প্রযোজ্য হবে।

যদি কখনোও আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়, তখন আপনাকে ৩০১ রিডাইরেকশন অপশন ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু পরবর্তিতে এতে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

এবারে, চলুন জেনে নেই, আপনার নির্বাচিত ডোমেইন ভার্শন কিভাবে সেট করবেন?

পূর্বে এই বিষয়টি গুগল সার্চ কনসোল থেকে ঠিক করা যেত। কিন্তু বর্তমানে সার্চ কনসোল থেকে এই অপশনটি বাদ দেওয়ার ব্যাপারে গুগল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এর বিকল্প হিসাবে গুগল ক্যানোনিকাল url কে সমর্থন দিয়েছে।

ক্যানোনিকাল ইউআরএল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং এটি দিয়ে ওয়েবসাইটের পছন্দের ভার্শন কিভাবে সার্চ ইঞ্জিনকে জানানো যায় তার জন্য এই পোষ্টটি পড়ুন।

রবট টেক্সট ফাইল অপটিমাইজ করুন

আপনার পছন্দের নির্বাচিত ডোমেইন সেট আপ করার পর পরবর্তি ধাপে robots.txt ফাইল টি অপটিমাইজ করার পালা।

রবট টেক্সট ফাইল সম্পর্কে অন্য একটি পোষ্টে যদিও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তবুও ফাইলটি সম্পর্কে সংক্ষেপে দু’ একটি কথা না বললেই নয়।

এটি একটি টেক্সট ফাইল যা ওয়েবসাইটের রুট ডিরেক্টরিতে থাকে। এর কাজ হলো সার্চ ইঞ্জিনকে নির্দেশনা প্রদান করা এই অর্থে যে সে বা তারা ওয়েবসাইটের কোন পেজগুলোকে ক্রাউল করে ইনডেক্স করবে আর ওয়েবসাইটের কোন অংশকে ক্রাউল ও ইনডেক্স করা থেকে বিরত থাকবে।

রবট টেক্সট ফাইলের ফরমেট কেমন হয়, এটি কিভাবে কাজ করে এবং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ফাইলটি কিভাবে তৈরি করবেন – এসবের উপর বিস্তারিত জানার জন্য এই গাইড পড়ুন।

সাইটের url স্ট্রাকচার অপটিমাইজ করুন

এখন আপনার কাজ ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ এর url স্ট্রাকচার রিভাইজ করা। URL স্ট্রাকচার দ্বারা url এর ফরম্যাটকে বুঝানো হয়েছে।

টেকনিক্যাল এসইও এর উত্তম চর্চা হিসাবে url স্ট্রাকচার নিম্নলিখিত উপায়ে অপটিমাইজ করতে পারেন-

  • ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার করা
  • দু’টো শব্দের মাঝে হাইফেন প্রয়োগ করা
  • URL এর শব্দ সংখ্যা যথাসম্ভব সীমিত
  • কনটেন্ট এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা
  • অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা শব্দাংশ পরিহার করা
  • ইউআরএর এর শব্দ সমুহের ভিতর টার্গেট কিওয়ার্ড ব্যবহার করা

সাধারণত অর্থে আপনি যখন আপনার সাইটের লিংক স্ট্রাকচার ডিফাইন করবেন, এরপর কনটেন্ট পাবলিশ করার সময় বা নতুন পোষ্ট তৈরির সময় আপনাকে তার ইউআরএল শুধু খানিকটা অপটিমাইজ করে নিতে হবে।

আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করেন, তাহলে এই সিএমএস টুল আপনার কাজটি অনেক সহজ করে দেয়।

আপনি লক্ষ করে থাকবেন, নতুন পোষ্ট তৈরির সময় সেই পোষ্ট টাইটেল এর শব্দগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউ আর এল স্ট্রাকচারে চলে আসে। তখন কোন শব্দ রাখবেন বা কোনটা বাদ দিবেন – সেটি আপনার ব্যাপার।

ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং নেভিগেশন

বিভিন্ন কারণেই ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার খুব গুরত্বপূর্ণ একটি এসইও ফ্যাক্টর হিসাবে বিবেচিত।

ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার ভালো থাকলে ইউজার কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর দ্রুত অন্য কোন কাংখিত পেজ এ যেতে পারে। সার্চ ইঞ্জনও এমন সাইট সহজে বুঝতে পেরে ইনডেক্সিং এর কাজটি সেরে ফেলতে পারে।

কিন্তু, একটি বড় ভুল যা অধিকাংশ ওয়েব মাষ্টারই করে ফেলে। তা হলো, কিভাবে ওয়েবসাইটের কনভার্শন বাড়ানো যায় সেদিকেই শুধু তাদের সমস্ত চেষ্টা ও দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে কাজ করতে চায়।

ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং তার ব্যবহার বান্ধব নেভিগেশন সিস্টেম বলে যে একটি কথা থাকে তা অনেকাংশেই তারা ভুলে যায়।

ফলে, তাদের সাইটের এসইও ফলাফল বিঘ্নিত হয়।

এর একটি ভালো উদাহারণ হতে পারে, ওয়েবসাইটের আরকাইভ পেজ লুকিয়ে রাখা এবং সমস্ত পোষ্ট একই ক্যাটাগরির অধিনে রেখে দেয়া। যা মোটেও উত্তম চর্চার মধ্যে পড়ে না।

গুগল যখন এককভাবে একটি পেজ মুল্যায়ন করে তখন ওয়েবসাইটের সার্বিক পরিস্থিতির দিকেও নজর দেয়। তখন, এই বিষয়টিও গুগলের দৃষ্টি থেকে বাদ যায় না। যা আপনার সাইট র‌্যাংকিং এর জন্য ভালো বার্তা বহন করে না।

এর জন্য, আপনার ক্যাটাগরি পেজকে অবশ্যই সুন্দর রুপে অপটিমাইজ করা বাঞ্চনীয়। যদি আপনি তা থেকে এসইও বেনিফিট পেতে চান।

Breadcrumb মেনু যোগ করা

Breadcrumb মেনু হচ্ছে কোন ওয়েবপেজ এর উপরে বা নিচে কতগুলি লিংক এর ধারাবাহিক উপস্থিতি যা ইউজার কে পিছনের পেজে অথবা সরাসরি হোমপেজ এ নেভিগেট করতে ব্যবহৃত হয়।

পিছনের পেজ বলতে সাধারণত: ক্যাটাগরি পেজ বুঝানো হয়।

এই Breadcrumb মেনু দু’টি প্রধান উদ্দেশ্য সার্ভ করে।

  • এর মাধ্যমে ইউজার সহজেই নেভিগেশন করতে পারে। পূর্বের পেজ এ নেভিগেট করতে ব্রাউজারের ব্যাক বাটনে ক্লিক করতে হয় না।
  • সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার সম্পর্কে ভালো একটি বার্তা বা সংকেত পায়।

বিভিন্ন এসইও গাইডে Breadcrumb কে এসইও কার্যক্রমের একটি উপাদান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারন, ওয়েবসাইটে বাস্তবায়নের জন্য গুগল এটিকে সুপারিশ করে।

আপনি যদি এখনোও এটিকে সক্রিয় না করে থাকেন তাহলে নির্দিধায় আপনার ওয়েবসাইটে তা করতে পারেন।

স্ট্রাকচারড ডাটা মার্ক আপ

সার্চ ইঞ্জিনে ওয়বসাইটের র‌্যাংকিং এর ক্ষেত্রে স্ট্রাকচারড ডাটার গুরত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ, গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজ এ এটি ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

স্ট্রাকচারড ডাটা সম্পর্কে অন্য একটি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

এখানে সংক্ষেপে কিছু ধারণা দিচ্ছি মাত্র –

এই ডাটা হচ্ছে এক ধরণের কোড যা আপনার ওয়েব পজ এ যোগ করতে পারেন। কোডটি সার্চ ইঞ্জিন ক্রাউলার এর নিকট দৃশ্যমান হয় এবং এই কোড এর সাহায্যে সার্চ ইঞ্জিন ওয়েব পেজ এর কনটেন্ট সম্পর্কে ধারণা পায় যে তা কোন বিষয়ের উপর লেখা হয়েছে।

এর অর্থ এই দাড়ায় যে, এই কোড ব্যবহারের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনের ভাষায় সার্চ ইঞ্জিন ওয়েব পেজ এর কনটেন্ট সম্পর্কে বার্তা প্রেরণ করা। যে সেটি কোন ধরণের বা কি বিষয়ের উপর।

প্রশ্ন উঠতে পারে, স্ট্রাকচারড ডাটা কনটেন্ট এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া সত্ত্বে এটি টেকনিক্যাল এসইও এর অংশ হয় কিভাবে?

এর কারণ – এক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষ ধরণের code সেই ওয়েবপেজ এ ব্যবহার করতে হবে।

সাধারণত: কোন ওয়েবপেজ এর ক্ষেত্রে এটি একবারই ব্যবহার করতে হয়।

স্ট্রাকচারড ডাটা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ক্যানোনিকাল url

এটির সাহায্যে গুগলকে বলে দেয়া হয় যে সে আপনার ওয়েবসাইটের কোন ভার্শনটি ইনডেক্স করবে। ধারণাটি অনেকটা preferred domain এর মত যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

তবে, ক্যানোনিকাল url এর বাইরে যে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে ওয়েবসাইটের ডুপ্লিকেট কনটেন্ট ইস্যু দুর করার কাজে।

এজন্য, আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি পেজ এর জন্যই একটি ক্যানোনিকাল url নির্দিষ্ট করতে হবে। যার মাধ্যমে ডুপ্লিকেট কনটেন্ট সমস্যা সমাধান করা হয়।

ক্যানোনিকাল url সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

এছাড়াও টেকনিক্যাল এসইও কাজের নিয়ম হিসাবে নিচের কাজগুলোও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে হবে-

  • ওয়েবসাইটের ৪০৪ পেজ অপটিমাইজ করা
  • XML সাইটম্যাপ অপটিমাইজ করা
  • ওয়েবসাইটে SSL যোগ করা
  • ওয়েবসাইট স্পিড অপটিমাইজ করা
  • মোবাইল বান্ধব সাইট তৈরি করা
  • AMP ভার্শন যোগ করা
  • পেজিনেশন এবং মাল্টি লিঙ্গুয়াল সাইট

বন্ধুগন, টেকনিক্যাল এসইও সম্পন্ন করার উপর বর্ণিত তথ্য নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে সাড়া দেওয়ার অনুরোধ করছি।

Leave a Comment