এসইও কি? এসইও কেন এত প্রয়োজন?

এসইও কি এবং এসইও কেন এত প্রয়োজন বিষয়টি নিয়েই আজকের এই লেখা। অনলাইন জগতে এসইও খুব পরিচিত একটি নাম যা অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য খুব গুরত্বপূর্ণ।

চলুন শুরু করা যাক মুল আলোচনা।

এসইও কি?

এসইও দ্বার বুঝায় হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন যার মাধ্যমে অর্গানিক সার্চ ইঞ্জন ফলাফলের দিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরের সংখ্যা ও মান উভয়টিই বৃদ্ধি করতে পারেন।

এসইও কি বা কাকে বলে এর উত্তরে অন্যভাবেও বলা যায় – তা হল, আপনার ওয়েবসাইটের এমন ধরণের উন্নতি সাধনের কৌশল যার ফলে সার্চ ইঞ্জিনের একটি সাইট অধিক পরিমানে দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে। আপনার ওয়েব পেজ যত বেশী সার্চ ইঞ্জিনে দৃশ্যমান হবে তত বেশী আপনি দর্শনার্থিদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন। এর ফলে যে সব পণ্য বা সেবা সরবরাহের জন্য আপনি ওয়েবসাইটটি চালু করেছেন তা ব্যবসা সফল হবে।

একটি কথা বলে রাখা ভাল- এসইও এর ভাষায় ওয়েবসাইটের ভিজিটর বা দর্শকদের ট্রাফিক নামেও বলা হয়ে থাকে।

একটি উদারণ দিলে এসইও কি বা এসইও কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে আরোও সহজ হবে।

যেমন ধরুন-

  • ওয়েব ট্রাফিকের মান: আপনি আপনার সাইটে গোটা দুনিয়ার ভিজিটরদের আকৃষ্ট করতে পারেন। কিন্তু গুগল যদি তাদেরকে বলে – আপনি এপল কম্পিউটারের উপর একজন ব্যবসায়ি অথচ বাস্তবে আপনি একজন আপেল বাগানের মালিক। তখন কি হবে? একেই বলা হয় ভিজিটরের গুনগত মান যা আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। শুধু ভিজিটর ডেকে আনার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই। সার্থকতা হল, ভিজিটর আসার পর তাদের মাধ্যমে আপনার উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে কিনা। মানে, আপনার ব্যবসার বিক্রয় বেড়েছে কিনা।

এজন্য, এসইকি কি- সহজ কথায় তার জবাব হল আপনাকে ঐসব ভিজিটর নিয়ে আসতে হবে যারা আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবার বিষয়ে খোজ-খবর নিতে খুব আগ্রহি যে ব্যবসাটি আপনি একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করছেন।

  • ভিজিটরের সংখ্যা: গুগুল সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ (SERPs) থেকে ক্লিক করে আপনার ওয়েবসাইটে যখন আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কযুক্ত লোকজন অর্থাৎ সঠিক ট্রাফিক আসা শুরু হবে, তখন যত বেশী ট্রাফিক আসবে আপনার জন্য তত ভাল হবে।
  • অর্গানিক রেজাল্ট: পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি সার্চ ইঞ্জিন থেকেও অনেক ট্রাফিক আনতে পারেন যা SERPs এর একটি বড় অংশ জুড়ে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু অর্গানিক ট্রাফিক হল ঐ সব ভিজিটর যাদের আনতে গিয়ে আপনার কোন প্রকার অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। এজন্য সুনির্দিষ্ট কোন সার্চ অনুসন্ধানের বিপরীতে আপনার ওয়েবসাইটের অবস্থান যদি ‍সার্চ ইঞ্চিন রেজাল্টের প্রথম পেজের প্রথম দিকে থাকে তখন আপনি বিনা পয়সায় ভিজিটর পেতে থাকবেন। আর এই ধরণের ভিজিটরকেই অর্গানিক ট্রাফিক বলা হয়।

এসইও কেন প্রয়োজন?

এসইও কি – বিষয়ের উপরের আলোচনা থেকে আশা করি প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন। এই ধারণা লাভের দ্বারা এসইও কেন প্রয়োজন তা বুঝার জন্য সহায়ক হবে। 

আপনি নিশ্চই শত সহস্রবার জেনে থাকবেন এসইও এর কথা যে ডিজিটাল দুনিয়ায় এসইও কেন এত বেশী গুরত্বপূর্ণ । যদিও এই বিষয়ে আপনি এখন পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারেন নি, তথাপি আপনি ‍এর প্রয়োজনের কথা নির্দিধায় স্বীকার করে নিবেন।

এসইও অনেক উপাদান নিয়ে কাজ করে। এসইও এর প্রয়োজনিয়তা বোঝার জন্য বা এসইও কেন গুরত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা লাভের জন্য প্রথমেই আপনার জানা দরকার এসইও কি এবং এর উপাদানগুলো কিভাবে কাজ করে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, এসইও যথেষ্ট পরিমানে ভূমিকা রয়েছে আপনার ওয়েবসাইটকে অনলাইনে দৃশ্যমান করার জন্য। যার ফলে আপনি অধিক সংখ্যায় ভিজিটর পাবেন যারা ভবিষ্যতে গ্রাহকে পরিবর্তন হয়ে আপনার ব্যবসার প্রসার ঘটাবে।

এছাড়াও আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি তৈরি করতে, কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে, নিজের বা প্রতিষ্ঠানের আস্থা বা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিতেও এসইও এর গুরত্ব অপরিসীম।

এখন আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি, এসইও প্রয়োজনিয়তা বুঝার জন্য চলুন প্রথমে সংক্ষেপে জেনে নেই এর উপাদান সম্পর্কে।

এসইও এর প্রধান উপাদানসমুহ:

কিওয়ার্ড (keywords):

অনেক আগে থেকেই প্রচলিত একটি কথা ছিল যে, কিওয়ার্ড হল এসইও এর একমাত্র কৌশল যা খুব বেশী প্রভাব রাখে। এই কথার অর্থ এই নয় যে, এখন বর্তমানে কিওয়ার্ডের ভূমিকা কমে গেছে।

আরোও দেখুন –

কিওয়ার্ড কিকত প্রকার এবং এটি কেন এত গুরত্বপূর্ণ?

অতীতে সাথে বর্তমানের তফাত এতটুকুই যে, এখন কিওয়ার্ড নির্বাচনে আপনাকে যথেষ্ট পরিমানে সতর্ক হতে হবে। এর জন্য প্রথমে ভালভাবে কিওয়ার্ড গবেষণা করে নিতে হবে। তারপর আপনার কনটেন্টের ভিতর যথাস্থানে নিয়ম অনুসারে বসাতে হবে।

কিন্তু কিওয়ার্ড দ্বার আসলে কি বুঝায়?

কিওয়ার্ড হতে পারে একটি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যা অনলাইন তথ্য ভান্ডার থেকে আপনার কাংখিত কনটেন্ট খুজে পেতে ব্যবহৃত হয়। যেমন আপনি অনলাইনে টি-শার্ট বিক্রি করার একটি ব্যবসা চালু করতে চান। এজন্য একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলে  সেখানেরবিভিন্ন রং ও ডিজাইনের টি-শার্ট পোষ্টিং দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা শুধু কাস্টমারের !

অনলাইন দোকানে গ্রাহক কিভাবে আসবে? অফলাইন দোকানের মত যার একটি ফিজিকাল এড্রেস থাকে! না- অনলাইন দোকানে কাস্টমার আসে সার্চ ইঞ্জিন থেকে। এখন প্রশ্ন হল সার্চ ইঞ্জিন থেকে কিভাবে আসে? এর উত্তরই হল কিওয়ার্ড।

যেহেতু আপনার অনলাইন দোকানের টার্গেট হল টি-শার্ট বিক্রি করা আর কাস্টমারের উদ্দেশ্য হল অনলাইনে টি-শার্ট ক্রয় করা, এজন্য কাস্টমার সার্চ ইঞ্জিনের query box-এ  “buy t-shirt” লিখে সার্চ করবে। এই “buy t-shirt” নামের শব্দগুচ্ছই হল কিওয়ার্ড। নিচে চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল-

এসইও

এবারে আরেকটি চিত্রের সাহায্যে দেখা যাক, গুগলে “buy t-shirt” দিয়ে সার্চ করার পর কি পরিমান ফলাফল প্রদর্শন করে-

এসইও

এটি দিয়ে সার্চ করার পর গুগল আপনার টি-শার্ট বিক্রি করার অনলাইন দোকানটিকে লক্ষ লক্ষ সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শন মধ্যে যদি প্রথম পেজের প্রথম দিকে র‌্যাংকিং করে, তখন কাস্টমার আপনার দোকানে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।

এখন প্রশ্ন হল, গুগলের সাথে কি আপনার কোন পূর্ব পরিচয় আছে বা কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে? হা-হা-হা!

থাকা না থাকা সমান কথা। কারণ গুগল স্বজন প্রীতি পছন্দ করে না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এত প্রতিযোগীতার মধ্যে আপনার দোকান পছন্দ করে গুগল প্রথম পৃষ্ঠায় অবস্থান করাবে?

এর উত্তর হল – সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

যাহোক, কিওয়ার্ড নিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেল। এবার চলুন এর পরের উপাদান নিয়ে কথা বলি।

কনটেন্ট:

এটি হল seo এর সবচেয়ে ভাইটাল অংশ। কারণ ইহাই হচ্ছে সেই চাকা যা ব্যবহার করে আপনি আপনার অডিয়েন্সের কাছে নিজেকে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসাবে স্থান দখল করে নিতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনার টি-শার্ট তৈরির একটি কারখানা আছে। সেখান থেকে উৎপাদিত টি-শার্ট আপনি অনলাইনে বিক্রি করবেন। এজন্য প্রয়োজন আপনার দোকানটির অনলাইন উপস্থিতি বৃদ্ধি করা। তাই আপনি টি-শার্টের উপর বিভিন্ন প্রকার আর্টিকেল যেমন- টি-শার্ট কত প্রকার, কিভাবে তৈরি করতে হয়, তৈরি করতে কি কি লাগে, ভাল টি-শার্ট চেনার উপায় ইত্যাদি বিষয়ে লিখে নিজের ব্লগে প্রকাশ করে যাচ্ছেন।

এখন, কোন লোক টি-শার্ট সম্পর্কে জানতে চেয়ে গুগলে সার্চ করার পর যদি আপনার লেখা আর্টিকেল গুলো পেয়ে যায় তাহলে আপনার এমন এক ভিজিটরের সাথে পরিচয় লাভ হয়ে গেল যে আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত যাকে বলা হয় relevant traffic যাকে আপনার অনলাইন দোকানের একজন গ্রাহক হিসাবেও ভবিষ্যতে আপনি পেতে পারেন।

প্রথম প্রথম আপনি শিক্ষামুলক বিষয় নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন যা প্রাসঙ্গিক, মজাদায়ক এবং চিত্তাকর্ষক হয়। তবে, কনটেন্টগুলি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমন-

  • ওয়েবসাইট কনটেন্ট
  • ভিডিও
  • ব্লগ
  • ইনফোগ্রাফিক
  • পডকাস্ট
  • Whitepapers ও e-book
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন পোস্ট
  • Local listings

Off-page SEO:

ইহা হল আপনার ওয়েবসাইটের বাহিরগত এসইও অপটিমাইজেশন প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতির প্রধান কার্যক্রম হল backlink তৈরি করা। যেহেতু অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার সাইটের দিকে মানসম্পন্ন backlink সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার সাইট সম্পর্কে মুল্যবান হিসাবে প্রত্যয়ন করে তাই কিভাবে quality backlink তৈরি করা হয়  তা একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে। এসইও backlink সম্পর্কে আমার অন্য একটি পোষ্ট রয়েছে যেখানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। লিংকে ক্লিক করে দেখে আসলে বিষয়টি আরোও সহজে পরিস্কার হয়ে যাবে।

Onpage SEO:

এই ধরণের এসইও কাজ আপনার ওয়েবসাইটের ভিতরে করতে হয়। যেমন, একটি পোষ্ট তৈরির সময় এর শীরোনাম বা title -এ সর্বোচ্চ কতগুলো character থাকতে পারে, ফোকাস কিওয়ার্ড নির্বাচন করা, মেটা ডেস্ক্রিপশনে কি লিখতে হয়, কনটেন্টে কিওয়ার্ড ডেনসিটি কেমন হওয়া চাই ইত্যাদিসহ আরোও অন্যান্য ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে অন-পেজ এসইও করতে হয়। অন-পেজ এসইও কিভাবে করতে হয় তা বিস্তারিত জানার জন্য লিংকে ক্লিক করুন।

Local SEO:

এই ধরণের এসইও চর্চা দিন কে দিন জনপ্রিয় হতে চলেছে যেহেতু অধিক সংখ্যয় লোকজন মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে গুগলে সার্চ কার্য সম্পাদন করছে। মোবাইলে তথ্য অনুসন্ধানের প্রায় অর্ধেকের পরিমান local search থেকে করা হয়। Local SEO সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে লিংকে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং:

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অন্য একটি পোস্টে করা হয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে- এখানে বিজ্ঞাপনদাতা হিসাবে অর্থ খরচ করতে হয়। যেমন, গুগল এডওয়ার্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া, pay-per-clik, ডিসপ্লে এডস ইত্যাদি।

তাহলে, আমাদের উপরের আলোচনা থেকে এসইও উপাদানগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা হয়ে গেল। এখন আমরা আমাদের মুল আলোচনায় যেতে পারি – তা হল এসইও কেন এত গুরত্বপূর্ণ!

এসইও কেন এত গুরত্বপূর্ণ?

বন্ধুগন, এসইও কি বিষয়ের আলোচনায় আমরা মাঝামাঝি পর্যায়ে চলে এসেছি। যদিও এসইও কেন প্রয়োজন – প্রসঙ্গে ইতোমধ্যে উপরের এক হেডিং-এ আলোচনা করা হয়েছে।

তবে, এসইও কি ও এর গুরত্ব আরোও পরিস্কার রুপে অনুধাবনের জন্য  “এসইও কেন এত গুরত্বপূর্ণ” প্রসঙ্গে আরোও কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে।

বিশ বছর আগেও কোন মানুষ ভাবতে পারেনি যে প্রযুক্তির এত দ্রুত বিকাস লাভ করবে। আজকের বিশ্বে ইন্টারনেট প্রযুক্তি ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনলাইনে তথ্য অনুসন্ধান করে, তথ্যের আদান-প্রদান করে এবং একে অপরকে বার্তা প্রেরণ করে।

গুগলের মাধ্যমে দৈনিক কি পরিমান মানুষ তথ্য অনুসন্ধান করে তা জানলে আপনি রীতিমত অবাক হয়ে যাবেন। অথচ গুগল ছাড়া আরোও সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে যেখান থেকে কম হলেও মানুষ তথ্য খোজার চেষ্টা করে।

তাহলে শুনুন, প্রতিদিন সারা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠি বা ৩.৮ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা বিগত ৭ বছরে দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি লাভ করে।

উপরের এই ডাটার ভিত্তিতে সহজেই অনুমেয় যে, এসইও কেন এত গুরত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, এই বিশাল জনগন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধান করে সময় কাটায় তাদের একটি অংশ যদি আপনার উপস্থিতি ‍সার্চ রেজাল্টের মাধ্যমে দেখতে না পায় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়ে যায়! আপনার অনলাইন ব্যবসা কি তখন সফল হতে পারবে? আপনিই বলুন।

এছাড়া, স্মার্টফোনের ব্যাপকতার কারণে মানুষ এখন বলতে গেলে সবকিছুতেই গুগল নির্ভর হয়ে পড়েছে। একটু কিছু হলেই গুগল করার চেষ্টায় লেগে যায়। যেমন ধরুন, কেউ একটি রেফ্রিজারেটর কিনবে। তার আগে সে গুগলে পণ্যটি সম্পর্কে খবর নিয়ে দেখে – বাজারের কি অবস্থা। কোন ব্র্যান্ড রয়েছে, তুলনামুলক দাম কেমন, টেকসই কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এমনকি ছোট মাপের কোন সেবাধর্মি ব্যবসার ক্ষেত্রেও এসইও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যেমন-

খুবই সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরি “plumber in San Diego” নামের কিওয়ার্ড এর মাসিক সার্চ ভলিউম ১০০০-১০০০০.

এসইও

 

এমন স্পেসিফিক কিওয়ার্ড এর ক্ষেত্রেও দেখুন এর কত কঠিন প্রতিযোগীতা –

এসইও

বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে বুঝা যায়, এত সংখ্যার সার্চ রেজাল্টের মধ্যে গুগলের প্রথম পৃষ্ঠায় যে সব সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের নাম আসবে তারাই কেবল অনলাইনে গ্রাহক পাবে। আর বাকিরা বঞ্চিত হবে। কারণ, কোন অনলাইন সেবা প্রার্থি গুগলের প্রথম পেজেই যদি কাংখিত ফল পেয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সচারাচর যায় না।

এখন প্রশ্ন হল- এত লক্ষ ফলাফলের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানকে গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিন কিসের ভিত্তিতে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসবে? এক কথায় এর উত্তর হল এসইও। তাহলে, এসইও কেন এত গুরত্বপূর্ণ – বিষয়টি আশা করি এবার আপনি অনুধাবন করতে পেরেছেন।

[San Diego হল ক্যালিফোর্নিয়ার একটি শহর, আর plumber এর অর্থ অনেকটা সেনিটারি মিস্ত্রির মত। ]

এবারে, এসইও কেন প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমি ধারাবাহিকভাবে বলছি,

১. অধিক পরিমানে অর্গানিক সার্চ পেতে:  

ওয়েব ট্রাফিকের প্রাথমিক উৎস হল অর্গানিক ট্রাফিক। ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের দক্ষতার পরিচয় হল তার অর্গানিক ট্রাফিকের সংখ্যা। যার উপর কোন ব্যবসার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। কেননা অর্গানিক ট্রাফিকের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের engagement এবং conversion rate ভাল হয়। গুগল ইয়াহু, ইয়ানডেক্স, bing, baidu সহ সকল সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে যেহেতু সার্চ মার্কেটের প্রায় ৭৫% অংশ ধরে রেখেছে।, গুগলের এত বিশাল আকারের সার্চ মার্কেট ধরে রাখার কারণে পৃথিবীব্যাপি যাদেরই ইন্টারনেট ও কম্পিউটার রয়েছে তারা দিনে একবার হলেও গুগল ব্যবহার করছে।

কাজেই এসইও বিষয়ে গুগলের গাইডলাইন মেনে চলা দরকার। আর এই গাইডলাইনের মুল কথাই হল, মানসম্পন্ন এসইও কাজ সম্পাদন করা যদি আপনি গুগলে আপনার সাইট ranking করাতে চান।ওয়েবসাইটের প্রতি বিশ্বাস এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানোর কাজে: এর মাধ্যমে আপনার একটি ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড তৈরি হয়ে যেতে পারে। ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় দু’টি জিনিসের-

এক: আপনি অডিয়েন্স বা গ্রাহককে কি দিচ্ছেন মানে হল কনটেন্ট: যেমন পণ্য, সেবা, তথ্য, আইডিয়া ইত্যাদি।

দুই: লোকেরা আপনার কনটেন্ট বিষয়ে পরস্পর কি বলছে।

যখন আপনি একটি সাইট অপটিমাইজ করবেন তখন বিষয়টি একই রকম। আপনাকে এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যা অডিয়েন্সের চাহিদা পূরণ করে, তারপর সখানে অনপেজ এসইও করুন। এটি হল ব্র্যান্ড তৈরির প্রথম অংশ। তারপর ব্র্যান্ড তৈরির দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ লোকেরা কি বলে তার উত্তর পাওয়ার জন্য অফপেজ এসইও করুন। মানে হল মানসম্পন্ন backlink তৈরি করুন যা কিন্তু আপনার নিজের হাতে নয়। আপনার ওয়েব কনটেন্ট ভাল হলে অর্থ পণ্যটি ভাল হলে ঠিক তখনই লোকেরাও ভাল বলবে।

কাজেই , এভাবেই এসইও আপনার জন্য একটি ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড তৈরিতে কাজ করে।

২. সার্চ ইঞ্জিনে ranking তৈরি করতে:

এসইও কি – এর সঙ্গায় জেনেছেন যে, ইহা করলে গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংকিং পেতে সুবিধা হয়।

কোন ওয়েবসাইটে এসইও কাজের প্রধান লক্ষই হল ranking করা যাতে আপনি অধিক পরিমানে ভিজিটর পেতে পারেন। আর ভিজিটর যত বেশী হবে আপনার ব্যবসাও তত সফল হবে- এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই ট্রাফিকই ভবিষ্যতে আপনার গ্রাহকে পরিণত হবে।

এজন্য যদি আপনি আপনার সাইটে অধিক সংখ্যায় ভিজিটর আনতে চান তাহলে এসইও করতে হবে।

৩. এসইও করলে এড সার্ভিসের প্রয়োজন কমে যায়:

এসইও এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল – আপনাকে গুগল বা অন্য কোন জায়গায় এড সর্ভিসে অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজনিয়তা অনেকাংশে কমে যাবে। প্রচলিত বিজ্ঞাপন সম্পর্কে আমাদের ইতোমধ্যে ধারণো আছে। যেখানে কোন টিভি চ্যানেল, বা দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্যের প্রচার করা হয়। যা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় হিসাব করে চলে থাকে। ঐ সময়ের বাইরে আপনার বিজ্ঞাপন চ্যানেলগুলি প্রদর্শন করবেনা।

এবারে, এসইও এর বিষয়টি নিচে একটি চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হল:

এসইও

স্ক্রীনসটে প্রদর্শিত সবার উপরের অংশটি হল গুগলের ‍ads service যেখানে কেউ তার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার জন্য পয়সা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ঐ বিজ্ঞাপনে প্রতিবার ক্লিক করার মাধ্যমে ভিজিটর প্রবেশ করার জন্য গুগল আপনার নিকট থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা কেটে নিবে। গুগলের এই সেবাকে বলা হয় PPC  বা pay per click.

PPC সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বিজ্ঞাপন দাতার পয়সা তখনই খরচ হয় যখন একজন ইউজার গুগল কর্তৃক প্রদর্শিত ঐ বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে আপনার সাইটে চলে আসবে। যা অনেকটা প্রচলিত ads service এর মতই বলা যায়।

এভাবে প্রতি ভিজিটরের ক্ষেত্রেই অর্থ খরচের বিষয়টি জড়িত। যখন বিজ্ঞাপন দাতা যখন এই campaign থামিয়ে রাখবে, তখন থেকেই গুগল তার বিজ্ঞাপন দেখানোও বন্ধ রাখবে।

অপরদিকে, আপনার সাইট যখন অরগানিক পদ্ধতিতে গুগলে rank করে search result এর প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম পর্যায়ে অবস্থান করে নিবে তখন যত ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে ঢুকবে তার জন্য একটি পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না।

উপরের স্ক্রীনসটের নিচের অংশটি হল অর্গানিক ranking.

তবে, এখানে আপনাকে একটু সময় ও অর্থ ব্যায় করতে হবে এমন পেজ বা পোষ্ট তৈরিতে যা ভিজিটরের চাহিদা পূরণ করে। মানে, যে তথ্য পাওয়ার জন্য সে গুগলে সার্চ করেছিল তার যেন নির্ভরযোগ্যতা থাকে। আর, এই ক্ষেত্রে গুগল এলগরিদম কোন সাইটকে rank করানোর ক্ষেত্রে তা থেকে ইউজার কি পরিমান মুল্যবান কনটেন্ট পেল তা গুরত্বের সাথে বিবেচনা করে।

অতএব, এসইও কি – শিরোনামের অদ্যকার আলোচনায় বলার অপেক্ষা রাখেনা- এসইও এর মাধ্যমে ট্রাফিক পেতে আপনাকে একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না।

৪. টার্গেট অডিয়েন্সকে আপনার সাইট খুজে পেতে সহায়তা করে:

এসইও আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের সামনে আপনার সাইটকে উপস্থাপন করে যেহেতু তারা সক্রিয়ভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করে।

চিন্তা করে দেখুন- একজন ভোক্তার জন্য এটি কত সাধারণ ব্যাপার যে সে কোন পণ্য বা সেবার তথ্য তালাশে গুগলে সময় ব্যয় করে – যা এক বিরাট সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।

বাস্তবে, ৬২% ভোক্তা সার্চ ইঞ্জিনের আশ্রয় নেয় যখন সে নতুন কোন ব্যবসা, পণ্য বা সেবা সম্পর্কীয় তথ্য জানতে চায়। আর ৪১% লোক অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ করে যখন তারা কেনার জন্য প্রস্তুত হয়।

এখন আপনি যদি চান, আপনার ব্যবসায়িক সাইট ভোক্তা সাধারনের অনলাইন তথ্য অনুসন্ধানের ফলাফলে প্রদর্শিত হোক তখন আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত keyword ব্যবহার করে এসইও কাজ করে নিতে হবে।

অপর এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে পাওয়া যায়, ৪৮% লোক কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে উক্ত প্রতিষ্ঠানে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করা পছন্দ করে।

কাজেই আপনার সাইটের অনলাইন উপস্থিতি শক্তিশালী হলে আপনার ব্যবসায়িক লক্ষ্যও ঠিক তেমনিভাবে পূরণ হবে।

৫. আপনার সাইট অথারিটি এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে:

ওয়েবসাইট বা ডোমেইন অথারিটি প্রসঙ্গে অপর এক পোষ্টে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। মুল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে লিংকে ক্লিক করে সাইট অথারিটির বিষয়ে জেনে আসতে পারেন।

প্রচলিত বিক্রয় পদ্ধতিকে ইন্টারনেট নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে। কারণ বর্তমানে মানুষের মাঝে এমন এক প্রযুক্তিগত সম্পদ রয়েছে যার ফলে বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার পূর্বে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই এসইও কাজের মাধ্যমে আপনি সেই বিকল্প ব্যবস্থার অংশিদার হতে পারছেন। এটি তখনই বাস্তব রুপ লাভ করতে পারবে যখন আপনি যদি এসইও চেষ্টার সাথে কনটেন্ট মার্কেটিং যোগ করতে পারেন।

আপনি যখন কোন তথ্যবহুল মুল্যবান কনটেন্ট তৈরি করবেন তখন পাঠকদের মাঝে আপনার সম্পর্কে এক ধরণের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে যা buyer journey এর প্রাথমিক পর্যায়ে হয়ে থাকে।

নিচে একটি চিত্রের সাহায্যে buyer journey এর ধাপগুলো উল্লেখ করা হল-

এসইও

প্রথমত, গুগলের মাধ্যমে ইউজার আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত কোন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনার সাইটের সাথে পরিচয় লাভ করার সুযোগ পাবে। যদি আপনার সাইট এসইও করার মাধ্যমে গুগলে রেজাল্ট পেজের প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয়।

তারপর তারা আপনার সাইটে প্রচারকৃত তথ্যটি পড়ে নেয়। পড়ার পর যদি তাদের পছন্দ হয়, তাহলে তারা একে অপরের মাঝে শেয়ার করবে এবং আপনার ইমেইল লিস্টে সাবস্ক্রাইব করবে।

এই পর্যায়ে এসে প্রক্রিয়াটি একটু ধির গতি সম্পন্ন হয়। তখন ইউজার আপনার সাইটে বারবার প্রবেশ করতে পারে এবং কোন একশনে না গিয়ে আপনার ইমেইল কনটেন্ট পরবর্তি কয়েকমাস যাবত নিয়মিতভাবে তারা পড়তে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতির বেলায় এটি আপনার জন্য কিছুটা হতাসা তৈরি করতে পারে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আপনার প্রতিটি কনটেন্টই পড়ে থাকতে পারে। এভাবে তাদের মাঝে আপনার প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর ইমেজ বা ব্র্যান্ড তৈরি হতে থাকবে এবং আপনার সাইটটিকে তারা নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসাবে মনে করা শুর করবে।

সবশেষে তারা যখন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে বা বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে যাবে, তখন তারা নিজেরাই পণ্যটি সম্পর্কে জেনে যাবে যে তারা কি কিনতে যাচ্ছে। কারণ পূর্বে তারা এর উপর অনেক তথ্য যোগার করেছে যা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।

বন্ধুরা- এসইও কি ও কেন এত গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে পোস্টের তথ্যগুলো কেমন লাগল – কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। যদি কারোও কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখে জিজ্ঞাসা করবেন। আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

Leave a Comment